শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

রাত্রির সাথে একরাত - হাসান ইমতি


আমি রাত্রি পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি
আমাদের যৌথ অস্তিত্বের নীরব সাক্ষী হয়ে
ছাদের কার্নিশে শুয়ে আছে আমাবস্যার চাঁদ,
আমার চোখে মদির চোখ রেখে মুচকি হাসছে
রাত্রির সাথে একরাতের গোপন ভালোবাসা
রাতের স্বল্পদৈর্ঘ্য আয়ু বিরতিহীন ছুটে চলেছে
একঘেয়ে ঘড়ির কাঁটার পুরনো বৃত্তাকার পথে
ঘড়ির কাঁটায় এখন রাতের প্রথম প্রহর ...
রাত্রি এখন কিশোরী মেয়ের মত উন্মুক্ত
ঘড়ির কাঁটায় এখন রাত্রি দ্বিপ্রহর
রাত্রি এখন ভরা নদীর মত পূর্ণ যৌবনা ...
ঘড়ির কাঁটা এখন রাত্রি তৃতীয় প্রহরের ঘরে ...
স্বপ্ন ভঙ্গের মত রাত পোহাবার এখনো অনেক দেরী ...
ঘড়ির কাঁটা এখন রাত্রির শেষ প্রহর গুনছে
বার্ধক্যের মত রাত্রি এখন অন্তিম পথের যাত্রী ...
ঘড়ির কাঁটায় রাত্রি শেষের সফেদ ঘোষণা
নিয়ে সগৌরবে ফিরে এলো সাত সকাল ...
রাত্রির সাথে কথা এখনো অনেক বাকি ...
রাত্রি কেবলই নাগালের বাইরে চলে যায় ...
কথাই কেবল বাকি থেকে যায় ...

শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০১৪

স্মৃতির অতলে - বিলকিস আরা ক্ষমা



 একদিন ভালোবাসা শব্দটি না বুঝেই
পাপ করেছিলাম তোমাকে ভালোবেসে
এখন একাকীত্বের সংস্পর্শে শত জনম
আমি অপেক্ষায় আছি ...
সাক্ষী আছে একটি রাত, একটি বসন্ত
হাজার নক্ষত্র......
একটি মায়াবী আলোর রাত ছুঁয়ে যায় শরীর
অদ্ভুত অনুভূতি...
অস্থির নির্লজ্জ লজ্জা এসে গ্রাস করে আমায়
অন্তত একটি বার মারাত্মক কিছু ঘটুক
এই নিরীশ্বর জীবনে......
অন্তত একদিন, আমি একটি রাতের স্বপ্ন দেখবো
তোমার স্মৃতির ভেতর যে নদী...
একটি রাত ভালোভাসার বিষে ডুবে থাকবো
কামস্পৃহা জলতে থাকুক অনির্বাণ...
--------------------একদিন শুধু একদিন
আমি ডুবে যাবো
----------------তোমার স্মৃতির অতলে

জ্বলে ওঠো ভেনাসের মতো -শিল্পী রহমান



 তোমার বিমর্ষ পৃথিবী
পুরো সৌরজগতটাকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে
চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তাঁরা
সবাই এখন নিকষ কালো মেঘের ছায়ায় ডুবে গেছে
তাই সূর্যকে বলেছি,
তার আলোকের ঝর্নাধারায় উষ্ণ করে দিক-
তোমার হৃদয়ের অজানা কষ্টের গোপন কুঠুরি
চাঁদকে বলেছি ,
তার রুপোলী আলোয় সিক্ত স্নিগ্ধ করে দিক তোমার সকল সত্তা
তাঁরাদের বলেছি,
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরুক, ধুয়ে দিক তোমার কষ্টের কালো দাগগুলোকে
গ্রহেরা থাকুক প্রহরী হয়ে-
আর কোনদিন যেন কোন কষ্ট তোমায় স্পর্শ করতে না পারে
এবার তোমার বিমর্ষ পৃথিবীর কালো মেঘেদের বলো
দূরে সরে যেতে-
তুমি আবার হয়ে ওঠো উদ্ভাসিত
জ্বলে ওঠো ঝলমলে ভেনাসের মত-
দৃঢ় কিন্তু প্রেমময়
১৩ জুলাই ২০১২

ভালোবাসা আমাদের নয় - পলাতক হৃদয়


মুহুর্তগুলো তখন ওখানেই ছিল
তোমার মুঠোবন্দী সময়ে...
খুব ঊষ্ণ কিন্তু নীরব,
অনুভূতির স্পর্শ প্রবল জোয়ারে ভেসে ছিল হৃদয়..
অজানা পথের ভীরে
ছিল পথ চলা দুজনায়..
আমরা আমাদেরই মাঝে,
খুজেছিলাম অন্য সময়..
শুধু ভাষা ছিল শ্রুময়
বিদায় কি কভু এমনই হয়..
তীব্র ব্যাথা, অথবা যাতনাময়.?
শুনেছি,ভালোবাসলেই নাকি বেদনারা আসে কাছে
রাত আধার হলেই বিরহ কথা কয়..
অবেলার বিদায় কি আধার হলেই হয়
ঊদাসী সুর-অথবা গভীর ভাবনায়
নীরব দুরত্ত কামনার নয় তবু যেন সেটাই তীব্র হয়..
লোনা সপ্নে গড়া তোমার আধার অনন্ত হয়
অনাবিল আকাশ মাঝে
শুন্যতায়..
তখন বুঝেছি,
আমরা আমাদেরই ছিলাম
ভালোবাসারাই আমাদের নয়...

ওঠো, দাঁড়াও - প্রাচ্য দিবা


মেয়ে, মুছে ফেলো চোখ; ওঠো, দেখো
দুপুরের ঘনান্ধকার কেটে উঁকি দিচ্ছে
বিকেলের নির্মল সূর্য!
ভুলবে না জানি রাহুসময় যখন করেছে
ছেঁড়াভেরা তোমার সযত্ন রক্ষিত
সোনাদেহ রাবণ এখানে ফেরাউন
আধুনিক!
ওঠো, দেবী;
এখনো মানুষ অসহায়-
পুজে তোমায় আশ্রয় তুমি
প্রেরণা ভবিষ্যৎ;
স্বর্গের বাণী তুমিই বীণাপাণি-
দেহ নয়, দেহ নয় উপাস্য তায়!
ওঠো, মেয়ে;
হারায়নি কিছুই করো বিশ্বাস-
দেখো ফুল, পাখি, প্রজাপতি
সবাই আগেরই মতো প্রাণচঞ্চল
তোমারই পানে তাকায় পরম
নির্ভরতায়!
ওগো, বীরাঙ্গণা একুশের;
তুমি তোমরাই একাত্তরের
উত্তরাধিকারিণী-
যেহেতু রাক্ষসেরা আজো জন্মায়
স্বাধীন বাংলায়!
দেখো, তোমার ভাইয়ের আজো
পথে পথে বোনেরাও সাথে-
শহীদ পিতা ধর্ষিতা মাতা
আর কবিদের সব কবিতা
পৃথিবীর ফোটা না ফোটা
সব গোলাপ অপেক্ষায়
তোমার!
দাঁড়াও আবার,
দাঁড়াতে হবে তোমাকেই-
যেমন দাঁড়ায় বাঘিনী
শাবক রক্ষায়-
সুন্দরবন যদি ব্যাপৃত
সারা বাংলায়!

রাজপথ - অপূর্ব ঘোষ


তিলোত্তমা নগরীর প্রতিটি উড়ালপুল; অষ্টাদশী প্রেমিকার মত
আমি যেন রাজপথ, আলগোছে বুকে নিয়ে শুয়ে আছি তাকে
নিকটে দূরে মায়াবি নিয়ন আলো ফোয়ারা তুলেছে,
সুউচ্চ টাওয়ার বৈভবের অহংকারে আকাশ ছুঁয়েছে
চারিদিকে চঞ্চলতা; মৌমাছির মত গুঞ্জরনে জনতার সমাগত স্রোত.....
নিবিড় পুলকে অন্তহীন ভেসে চলা যেন,
সংগোপনে টেরপাই মনে,-
নগরী মেতেছে যেন উচ্ছল যৌবনে.....
তবুও অন্তরালে বিষাদের ধুলো-ধোঁয়া থাকে,
বস্তির প্রতিটি ঘরে মর্মান্তিক দারিদ্রতা রসিকতা করে
তবুও রক্ত লোলুপ মশকের দল আততায়ির মত ঘোরেফেরে
এখানে বিলাস আছে
বিস্তির্ণ আকাশে আছে ছানাকাঁটা স্বপ্নের মেঘ,
এখানে দক্ষিণের জানালা খুলে দিলে
দূষিত বায়ুতে ভাসে প্রসাধনের সুউগ্র আঘ্রাণ,
ডিজেল-প্রেট্রোল আর বাবুদের ঘ্রাণ
এখানে বেকার প্রান প্রত্যক্ষ ফুটপাতে ঘোরে ঘর বাঁধার অঙ্গিকারে,
পুতুলের মত স্নিগ্ধ প্রেমিকার সাথে -
আমার বুকের ওপরে প্রখর চৈত্রদিনে অথবা মুষল শ্রাবণে
অথবা কোকিল শূণ্য কোন বসন্তের ভোরে
আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি
বিস্ময়ে- আপন্ন হই মনে,
নিজেকে জড়াই এক হতবাক জালে,
যখন জীবন থমকে দাঁড়ায়
ম্যাজিকের মত লাল আলোর নিষেধ সিগনালে
প্রিয়তমা নগরীর বিচিত্র হৃদয় যেন
কোথাও নিয়মে বাঁধা কঠিন শৃঙ্খলে,
তিলার্ধ্য বিভ্রম হলে অনিবার্য্য পতনের মুখে....
এখানে সবাই আপন,
দেওয়ালে-দেওয়ালে সখ্যতার বহু বিঞ্জাপন,
অথচ কেউ আত্মীয় নয়,
আন্তরিক শব্দপদ এখানে অচল,
বিবেক পিচ্ছিল বড় পারদের মত, তবুও বৈচিত্র আছে-
প্রানের প্রাচুর্য্য এখানে অসীম
এখানেই প্রতিটি উড়ালপুল
আমার বুকের ওপরে শুয়ে আছে ঘনসন্নিবেশে,
ভালোবাসার ক্রমশ উত্থান আর পতন ভালোবেসে
আমি এক রাজপথ,
সময়ের আলোছায়া পাতে
যে পথ তোমার হৃদয়ে গিয়ে মেশে, সব পথ শেষে অবশেষে