শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

ঘূর্ণিখেলা - হাসান ইমতি



তোমার পাতাঝরা ভাবনার শরীর ছুঁয়েছে আমার শীতার্ত দুপুর,
তবু তুমি আমার বুকভাঙা কান্নার বেলাভূমিতে আলতো
পায়ের ছাপ মুছে দিয়ে চলে গেছ এক জীবনের না ফেরা দূরত্বে,
অনাগত প্রজন্মের কাছে সব অপরিশোধিত শারীরিক ঋণ
জমা রেখে আমি আজ নৈঃশব্দের কারাবাসে চলে যেতে চাই,
তবু যদি তুমি মেনে নাও মেঘভাঙা বসন্তের নির্লজ্জ আহবান
তবে তোমার ভালোথাকার ভ্রূণমূলে জ্বালিয়ে দিয়ে যাবো বিদেহী আগুন,
যদি ভুলে যাও এই যাত্রায় তোমার পাশে নিঃশব্দে কেউ ছিল কোনদিন,
তবে তোমাকে দেবো আমার সব বুকভাঙা কান্নার সশ্রম উত্তরাধিকার,
আমার অসংখ্য নির্মোহ জীবন শুধু তোমাতেই ছিল নিবেদিত
সব ভুলে তবু তুমি যদি ছুড়ে ফেলে দাও ভালোলাগার সোনালী কাবিন
তবে তোমার খোঁপায় গেঁথে রেখে যাবো আমার না ফেরার ফসিল,
আশাবাদী চোখে তবু তুমি যদি ফিরে আসো জীবনের অসম ঘূর্ণিখেলায়
তবে তোমার জন্য নিঃশেষে খোলা রইল গন্তব্যহীন অনন্ত পিছুটান

মেয়েটিকে ফিরে যেতে বলো - অনন্ত আরফাত



অলকানন্দা নদী , শোনো --------------
মেয়েটিকে বলো , আমি চলে গেছি এই পথে
ভীষণ দীর্ঘশ্বাসে , ছোট ছোট পায়
আমার পাওনার ফুল এখনো দেয়নি সে , অবিশ্বাসে
বলো , আমি চলে গেছি ঢের পথ , দেরি হলে ---
শুন্যতা চিড়ে আমি আর এসে দাঁড়াবো না ;
এই কাশফুল-মেঘ , কচুপাতা রঙ সাপ
মাছরাঙা , জল ফড়িঙের চোখে চোখ রেখে
মানুষের মতো ধীরে ধীরে হেঁটে চলে যাবো ,
যদিও সে ফিরে আসে , চলে যেতে বলো
আমার কাঁকর পথ , মেয়েটি ব্যাথা পাবে
নরম নরম গাল , সন্ধ্যার মতো ঘন ঘন চুল
শিশিরের মতো ফোটা ফোটা বাদামি তিলগুলো
এই কাশবনে ঘষে ঘষে রেখে যেতে বলো ;


আবার কয়েক লক্ষ মিলিয়ন বছর পরে
পৃথিবীর অন্য কোন দীর্ঘতম রাত্রির শেষে
যদি ফিরে এসে দেখি তার চুলের গন্ধ নেই ,
আমি দুঃখ পাবো জেনো , অলকানন্দা নদী ---
আবার কয়েক লক্ষ মিলিয়ন বছর পরে
তুমিও আর তরুণীর মতো বাঁকাচোরা নাই ,
কাশফুল-মেঘ , জল ফড়িঙের সবুজাভ লেজ নাই
তবুও তার বাদামি তিলের গন্ধ শুঁকে শুঁকে আমি
তোমার ওই আধামরা কিনারে এসে দাঁড়াবো , নদী
যদি চলে আসে , মেয়েটিকে ফিরে যেতে বলো ---
এই কাশফুল-মেঘেদের কাছে চুলের গন্ধ রেখে দিয়ে

সংকেত - গুটিপোকা



লাল সিগন্যাল,
পকেট হাতড়ে কয়েন ছুঁড়ে দিই,
ধাতব শব্দে চমকে ওঠে নিরন্ন দুপুর,
অন্ধ চোখ বুঝে নেয় হাতের পরশে
ধাতব চাকতির বিনিময় মুল্য!
বেঁচে থাকো, ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন’---
বাঁচার দায়ে পথ চলা অসহায়ের আশীর্বাদ!
এক টাকায় পাওয়া যায় একবুক আকাশ!
সবুজ সিগন্যাল,
লোকাল ট্রেনে চড়লাম,
তিনজনের সিটে চতুর্থ ব্যক্তি--বসলাম কোনোমতে,
ট্রেন ছাড়ল তীক্ষ্ণ সিটি মেরে,


বাইরে ছুটছে ঘরবাড়ি, গাছপালা, শিয়াল-কুকুর,
লাইন টপকানো মানুষ-গরু-ছাগল,
আর প্রেমিকের ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বন প্রেমিকার দিকে
কিন্তু আকাশ কোথায়!
বুকের আকাশে ততক্ষণে বিষণ্ণ মেঘের ভিড়,
বুঝলাম, আমাদের নিম্নার্ধ অনেক বেশী প্রশস্থ
বুকের তুলনায়!

মৃগয়া - মুয়াজ মুসাফির


ক্রস করে একটু এগিয়ে এসে পিছু ফিরে চাইতৎক্ষণাৎ চোখাচোখি
অ্যাঁই ছেলে,লাগবে?
কণ্ঠ শুনেই আমার সমস্ত নেশা অদৃশ্য হাতুড়ীর আঘাতে
কাঁচের মতো ভাঙতে থাকে
হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকগলাভর্তি জড়তাশিরা-উপশিরায় ভূকম্পন
আচমকা কেঁপে উঠে আট কুঠুরি নয় দরোজা
এই কি!
আঁটসাঁট জিন্স আর ফতুয়ার আলিঙ্গন,ইস্পাহানি হাওয়ায় বব-কাঁটা-চুল
উপযুক্ত মাংসের অপ্রমেয় দ্যুতি-
পদে পদে বৃষ্য নিতম্বের মাছরাঙ্গা ঢেউ
মনে হলো তাকে ভুলে ফুটপাতে চলে আসা ত্রিভঙ্গ তটিনী
অসুস্থ শহরল্যাম্পপোস্ট দুর্ভিক্ষের ফসল
এই আলো এই অন্ধকার রাত্রি,জাদুকরী ফুটপাতবহুক্ষণ পিছু পিছুআর কত?
দেখবোনা অখণ্ড কারিকা?অবিনীত আকর্ষণে হঠাৎ সামনে চলে আসা
এই কি!
অ্যাঁই ছেলে,অ্যাঁই ছেলে,লাগবে?লাগবে নাকি?অ্যাঁই ছেলে!অ্যাঁই!
সুন্দর ডেকে যাচ্ছে ক্রমাগত,সুন্দর লাগে না
আমার পায়ের নিচে উড়ে এসে জুড়ে বসে
এক জোড়া চাকা

পাগলী তোমাকে - অপূর্ব ঘোষ



আমার প্রেমের কবিতা গুলি
লেখা আছে পরিযায়ী পাখির পালকে,
কোন এক অবসরে পড়ে নিয়ো তুমি....
আসলে প্রতিটি পঙ্ক্তি
তোমারি জন্য লেখা,
সাহস হয়নি জানাবার
আজ তাই লিখেদিলাম
পাখির পালকে,
পড়ে নিয়ো তুমি
আর দিয়ো আমাকে অভয়
কোন এক বসন্তের মাসে
তোমার আঁচল জুড়ে
আমি যেন দ্বিধাহীন
লিখেদিতে পারি,
হৃদয়ের সব কথা
নিঃশব্দে কোন এক
পলাশের বনে,
ইতিউতি কত কথা
পলি হয়ে জমে থাকে
প্রেমিকের মনে ।