বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০১৪

বাংলা নববর্ষের সেরা পছন্দ

 না বলা কথা


-শিল্পী রহমান


বৈশাখের উদ্দাম বাতাসে অবাধ্য আঁচল
উড়ে গিয়ে পড়েছিল তোমার মুখে ।
আমি কিছু বুঝে ওঠবার আগেই নিজেকে মুক্ত করতে
চাইলে তুমি প্রাণপণ।
স্বভাববশত আঁচল টান দিতেই-
মুখোমুখি ।
লজ্জা, কৌতূহল এবং বিস্ময়
সব একসঙ্গে ঘিরে আড়ষ্ট করেছিলো কয়েকশো বছর যেন।

নীরবতা ভেঙেছিলাম আমি
লজ্জা মেশানো মৃদু কণ্ঠে -
'দুঃখিত'
তুমি বলতে পারো নি কিছুই।
চোখে লুকোনো ছিল সব।
এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে যে যার পথে -
বটতলার ছায়ানট সেরে বাংলা একাডেমীর বই মেলা ,
সেখানে তুমি ।
সেখান থেকে পিঠা ঘর,
ওখানেও তুমি ।
এরপর চটপটি , ফুচকা , চা, ঝালমুড়ি
সবখানেই তুমি ।
একজোড়া লজ্জাকাতর মুগ্ধ দৃষ্টি
ঘুরে ফিরেছে সারাটাদিন।
আবার সেই চোখের অনুপস্থিতিতে
আকুল হয়েছি আমি।
বাঁকা ঠোঁটের হাসি বিনিময় ।
কেমন একটা মিষ্টি ভালোলাগা
আচ্ছন্ন করেছিলো সেদিন।
সেই ভালোলাগা রুপ নিয়েছিল এক অস্থিরতায় ।
এরপর প্রতি বছর রমনার বটতলায় গিয়েছি
আমার আকুল অস্থির চোখ কেবল তোমাকেই খুঁজেছে ।
আমার অন্তর্যামী জানে
তোমাকে আরেকবার দেখবার জন্যে
আমার সে কি আকুলতা ,
আমার ভালোলাগার কথা বলবার জন্যে
আমার যে কি ব্যাকুলতা -
তোমার সেই লজ্জাকাতর মুগ্ধ দৃষ্টির আড়ালে
সেদিন কি কথা লুকোনো ছিল
তা জানবার কি উদ্বিগ্ন কৌতূহল আমার ।
পেরিয়ে গেছে কতগুলো বৈশাখ আরো –
প্রতিটি বৈশাখ আসে শুধু তোমার প্রতিক্ষায় ।
বাতাসে আঁচল উড়লেই
আমার সমস্ত সত্ত্বা কেবল তোমাকেই পেতে চায়।
বৈশাখের অবাধ্য বাতাসে
সেদিনের না বলা কথা
মিষ্টি ভালোলাগায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
কেমন একটা চিনচিনে ভালোলাগা ।




ফিরে ফিরে এসো পহেলা বৈশাখ


- হাসান ইমতি


দীঘল রাতের আঁধার সীমানা পেরিয়ে নতুন আলোকে সারা
ভূলোক রাঙিয়ে সত্য সুন্দরের চির উন্নত ঝান্ডা বয়ে নিয়ে
বুকের জমিনে তুমি এসো আশা জাগানিয়া পহেলা বৈশাখ,
পিছে ফেলে আসা পুরনো স্মৃতিময় পথের জমিনে জমে থাকা
পুরনো সব পঙ্কিলতা পেছনে ফেলে নতুনের আগমনী বার্তা
নিয়ে তুমি এসো অরুণ আলোর রঙে রাঙা পহেলা বৈশাখ,
সব ভেদাভেদ হানাহানি ভুলে গিয়ে ভালোবাসার দাবীতে
হাতে হাত রাখা উষ্ণ বন্ধুতের আগে বাড়ার অনাবিল ভরসা
নিয়ে তুমি এসো মুকুলিত স্বপ্নের রঙে আঁকা পহেলা বৈশাখ,
হৃদয়ের সহজাত উষ্ণতায় স্বার্থ বিভেদের যতসব অনুদার
দেয়াল ভেঙে চুড়ে ফেলে কুল উপচানো অবাধ জলের ঝর্ণা
হয়ে তুমি বারবার ধরাতলে ফিরে ফিরে এসো পহেলা বৈশাখ ।
সময়ের কালস্রোতে বহুবার ভেঙে যাওয়া আশাহত জীবনের
পরাভুত বাতায়নে নতুন অঙ্কুরিত স্বপ্নের রঙিন ভ্রূণ মুকুল হয়ে
হৃদয় রাঙাতে তুমি বারবার ফিরে ফিরে এসো পহেলা বৈশাখ ।



নতুন দিনের জয়গান


- সুবীর কাশ্মীর পেরেরা


মনের কালিমা যাক মুছে নব বর্ষে;
নতুন আলোয় চলি পথ মেলে ডানা
স্বপ্নেরা জাগায় প্রানে নতুন পরশে
শুভ্র পালকে হারাতে আজ নেই মানা;-
যা ছিলো পিছনে, পড়ে থাকে, থাক দূরে
সম্মুখ গগণে উঠিছে ভোরের রবি,
আশাগুলো বেঁচে থাক নব গান সুরে
পাল্টে যাক উল্টে যাক পুরনোর ছবি।
দিকে দিকে আজ নতুনের জয়গান,
পাখি দল করে খেলা মুক্ত নীলাকাশে
খোলা নদে জেলে-মাঝি করে রৌদ্রস্নান
নব বর্ষে হর্ষ ধ্বনি আকাশে-বাতাসে।
এসো শ্যামল বাংলা আমার করি পন,
বিশ্ব মাঝে টিকে থাকুক এ শুভক্ষণ। 



 নববর্ষের


- দীপঙ্কর বেরা


বৈশাখের বাংলা সুরে নতুন বছর
জাগায় হৃদয়ে আশা নব উন্মাদনা
বাঙালীর ঘরে ঘরে সুখ সমাদর
উন্নাসী কালবৈশাখী করে আরাধনা ।
হালখাতা ব্যবসায়ী আবার উদ্যমে
শিক্ষার প্রতিষ্ঠা ভাষ্য আলোকিত বুকে
বার্ষিক মূল্যায়নের সম্ভাবনা শ্রমে
উচ্চারিবে সব ধ্যান বীরত্ব স্বভাবে ।

খর তাপে বাঙালীর ঝিমধরা হৃদে
বায়ু বয় প্রাণ খোলা সবুজের দ্বারে
বর্ষ বরণীয় ভোর জাগে আল খেতে
পার্বণ মিলনে বাংলা বিশ্ব শ্রেষ্ঠ 'পরে ।
যুগের তিথিতে দিন আসে নববর্ষ
আগামী বাঙালী সূর্য জীবনের হর্ষ ।



বৈশাখের শশাঙ্ক


- অরুণ কারফা


কোথায় যে সখী কাল বৈশাখী
দু চক্ষু যায় যৎদূর
খাঁ খাঁ করছে নিস্তব্ধ দুপুর
দেখা যায় শুধু রোদ্দুর।
তবু এক দূরে মেঘ যায় উড়ে
নেই সঙ্গী সাথী
সারাটা আকাশে ঘুরেই বেড়ায় সে
যেন অমাবশ্যার বাতি।
বাঁশগাছ সবে পিপাসার্ত নীরবে
ঝুঁকেছে দিঘির ’পরে
ঠিক তারি নীচে পাতিহাঁস গুলো
বসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
সাঁঝের আকাশে চাঁদ যেই হাসে
দিঘির বুকে সে আঁকে
শিরশির করে কাঁপা এক ছবি
ঢেউ গুলোর আঁকেবাঁকে।
ঝিল্লীর ডাকে প্রেমিক প্রেমিকাকে
এমনই করেছে বিমোহিত
বৈশাখীর রাতে জোনাকির সাথে
তারা ঘন ঘন শিহরিত।

 

বৈশাখী উত্তাপ


- সাইদুর রহমান

নববর্ষে শুরু,এ কি দারুণ উত্তাপ
ইলিশের দামও এবার উর্ধ্বগতি
বৈশাখী গন্ধে ইলিশের কত দুর্গতি
বছরের শুরুতেই হতাশার ছাপ।
বাঙালির ঐতিহ্য প্রাণের উৎসবে
সবে উঠেছে মেতে,খাবে পান্তা ইলিশ
সাম্য অহিংসার মন্ত্রও পড়ে ফিস্ ফিস্
সারাটি বছর রবে এমনি কলরবে।
কেনাকাটা সাজগোজের পড়েছে ধুম
স্বপ্নরসে ভরপুর মনন,অস্তিত্ব
মানুষ যেন দেখায় বড়ই উদীপ্ত
দীনের শুধু শ্বাস,না বৈশাখ না ঘুম।
মেলাতে ব্যস্ত বড়ই গোটা দেশ জাতি
নিঃস্ব গরীবেরা কি করুণ তাকায়
তাদেরও আহ্লাদ থাকে, বড্ড ভাবায়
জীবন যুদ্ধে যাদের,ফাটে শুধু ছাতি।
তাই বুঝি বৈশাখী ঝড় বেজায় ক্ষিপ্ত
স্ফূর্তি আয়াস ভেঙ্গেচুরে বাঁধায় গোল
হয়ে যায় ক্রোধে মানুষ খেকো শার্দুল
আকাশ বাতাসও হয় অতি উত্তপ্ত।
এসো গাই বৈশাখী গীত মন মন্দিরে
করি প্রার্থনা,সকলের সুখী জীবন
থাকি মিলেমিশে হাসি খুশী সারাক্ষণ
সারা বছর থাকি ডুবে প্রেম সাগরে। 

 

বৈশাখী প্রভাত


- একলা মানুষ


আজ নূতনের নিশান উড়ায়ে
বৈশাখ ডাকে আয়,
আয় হিংস্রতার দাবানল ঠেলে
সাম্যের গান গায়।
সবুজের ডাকে সাড়া দিয়ে চল
সভ্য আল্পনা আঁকি,
মিথ্যে গর্জন ভূলে গিয়ে চল
কিচির-মিচির ডাকি।
সভ্য সুন্দর পথে চলে চল
সভ্যতার আঁচল পাতি,
নিজস্ব সংস্কৃতি হৃদয় চুমে বলি
আমরা বাঙালি জাতি।


নবীন বৈশাখ


- পিয়ালী দত্ত


বৈশাখী তপ্ত ধারায় ধরনী যায় ফেটে
দুলকি চালে জগৎ চলে, আমের
ভরা মাসে বাতাসে বোশেখ
হাওয়া, তালপাতার সিরসির
চন্দন কাঠের বলিরেখা আজও
থাকে অধরা, সূর্যিদেবতার
আসর আজি করবে ধূ-ধূ খেলা
বালিয়াড়ি চেনা জীবন হবে দিগন্তহারা
কালবৈশাখী এলো বলে
তুমি হবে খুশি...প্রকৃতি আজি নতুন
করে পাবে খুনসুটি
লাল পলাশের গায়ে-গায়ে
বাজছে মাদল ধ্বনি
সন্ধ্যেবেলার মৃদু হাওয়ায়
মায়ের শঙ্খধ্বনি
শুনতে পাচ্ছো গাইছে গগন
গাইছে চঞ্চল হাওয়া
বৈশাখী এলো নতুন সাজে
নবীনের চাওয়া-পাওয়া...
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন