বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৪

স্বাধীনতা দিবসের সেরা পছন্দ



সেই রাতের কথা বলি !

- শিল্পী রহমান

রাস্তার এপাশটাতে ছিল ঘর
অন্য পাশে বিশাল একটি মাঠ।
এই পাশটায় আকাশ ছুঁতো মাঠের সীমানা।
অন্যপাশে দূরে দেখা যেতো পুলিশের আখড়া।
আকাশের নীল ছোঁবে বলে ওরা কতদিন ছুটে গিয়েছিলো
হাঁপাতে হাঁপাতে আবার কখনো সবুজকে বুকে ধরেছিল।
সেই মাঠের বুকে নেমে আসা এক কালো রাত্রির কথা বলছি ।
আমি পঁচিশে মার্চের কথা বলছি।
একাত্তুরে মাঠের ওপর নেমে আসা সেই ভয়াবহ রাতের কথা বলছি।
নিয়মমতো সূর্যাস্ত সেদিনও তেমনি নেমে এসেছিলো
সন্ধ্যাবাতি জ্বলবার আগেই ঘরে সবাই ওরা ফিরেছিল ।
অন্য রাতের মতোই ওরা সুর তূলে পড়া মুখস্ত করছিল।
রাত্রি যখন সাড়ে দশটা!
ঘুমোতে যাবার প্রস্তুতি তখন সবেমাত্র শুরু ।
হঠাৎ রাত্রির অহংকার কাঁপানো কান ফাটানো আওয়াজ,
অন্ধকার চিরে বেরিয়ে আসা আগুনের লেলিহান...
কি ভয়াবহ সেই আওয়াজ
কি ভয়ংকর আগুনের তাণ্ডব নৃত্য!!
সারা বাংলাদেশের প্রাণ কেঁপে কেঁপে জেগে উঠেছিল
গাছপালা পশুপাখি প্রতিটি জড়, কেঁপে কেঁপে জেগে উঠেছিল

চিৎকার করে মা বলেছিলেন-
আলো নেভাও, লুকোও খাটের নীচে
হুড়মুড় করে দৌড়ে সবাই খাটের নীচে ঢুকেছিল।
সবচেয়ে যে ছোট , মার আঁচলে আঁচলে ঘোরে,
বোঝেনি সেতো কিছুই, সেদিন মার পিছু পিছু ঘুরছিল ।
দুরুদুরু বুকে দরজা খুলে উঁকি দিয়ে মা দেখেছিলেন
মাঠ আর মাঠ নেই যেন বাকি।
এখানে সেখানে ফুলকি দিয়ে আগুনের গোলা জ্বলছিল।
ছোট মেয়েটি আঁতকে উঠে মাকে জড়িয়ে ধরেছিল।
মাথার ওপর তীব্র বেগে আগুনের তীর ছুটছিল।
গুলির আওয়াজে অনিশ্চয়তার কান্না ভেসে আসছিল।
মৃত্যু চিৎকার, আগুনের পট পট আর কুকুরের কান্নার শব্দে
নারকীয়তার দৃশ্য বুঝি সবার বুকে জেগেছিল।
হঠাৎ আগুনের তীর-
ছাঁদ ফুঁড়ে ঢুকে পড়েছিল ।
দিশেহারা মা, সন্তান নিয়ে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল।
সবাই মিলে নির্মম ভাবে আগুনে সেদিন পুড়েছিল ।
আকাশ তখন নীল হারিয়ে লাল কালোতে কাঁদছিল
সবুজ মাঠে পাষাণ সে রাতে নিষ্ঠুর ছবি এঁকেছিল ।
আগুনে পুড়েছিল রাত, আগুনে পুড়েছিল ঢাকা
সুদীর্ঘ রাত ভোর হয়েছিল অবশেষে।
মাঠের পাশের ঘরগুলো শুধু পুড়ে স্তুপ হয়েছিল ।
সেই রাতটি ছিল ২৫শে মার্চের রাত।
একাত্তুরের পঁচিশে মার্চের রাত ।

স্বাধীনতার মুখোমুখি

-
হাসান ইমতি

হে স্বাধীনতা, তোমার বাঙময় ভাবনার বিলাসিতা আমার
নিমগ্ন সত্ত্বা অভিমুখে কেবলই প্রিয় স্বজন হারানো অপার
শূন্যতা ঘেরা অব্যক্ত হাহাকার বয়ে নিয়ে ক্রমাগত ধেয়ে
আসা এক আবহমান রক্তের অনন্ত লাল নদী হয়ে রয়ে যায়...

হে স্বাধীনতা, তোমার জন্য নিঃশেষে উৎসর্গীকৃত ত্রিশ লক্ষ
দেশপ্রেমিক মানুষের ঝরে যাওয়া রক্তের আন্তিম লাল ধিক্কার
আমাকে কেবলই অগ্নিগিরির জ্বালামুখের মত কিছু উত্তরহীন
পুরনো প্রশ্নের মুখোমুখি অসহায় দাড় করিয়ে দিয়ে যায়...

হে স্বাধীনতা, তোমাকে পেতে অকাতর লুট হয়ে যাওয়া
আড়াই লক্ষ মা বোনের অপারগ সম্ভ্রম আমাকে কেবলই
টেনে নিয়ে যায় অসহায় বাস্তবতার গরাদবিহীন কাঠগড়ায় ...

হে আমার বাংলা মা তুমি কি পেয়েছ প্রিয় সন্তানের রক্তের অর্ঘ ?
হে আমার বাংলা মা তুমি কি পেয়েছ প্রিয় সন্তানের সম্ভ্রমের মূল্য ?
হে আমার বাংলা মা তুমি কি পেয়েছ স্বাধীনতার অমলকান্তি সুখ ?
হে আমার বাংলা মা তুমি কি পেয়েছ ভালো থাকার নিরাপত্তা ?
হে আমার বাংলা মা তুমি কি পেয়েছ সুখী ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা ?
তুমি কি দিতে পেরেছ সব সন্তানরে সমান অধিকারের শালীনতা ?
তুমি কি দিতে পেরেছ সব সন্তানরে ন্যায়বিচারের সম অধিকার ?
তুমি কি করতে পেরেছ সব মুখে হাসি ফোটানোর নির্মল অঙ্গীকার ?
তুমি কি পেরেছ দিতে তোমার সব সন্তানরে ভাবনার স্বাধীনতা ?
তুমি কি পেরেছ দিতে তোমার সব সন্তানরে উন্মুক্ত নীল আকাশ ?

হে আমার বাংলা মা, এ প্রশ্নের উত্তর জানেনা তোমার অপারগতা,
উত্তরহীন এসব প্রশ্ন কেবল প্রশ্ন হয়ে জমে জমে স্তূপ হয়ে রয়,
তবু তা ছুতে পারেনা কিছু আয়েশি সুখের সারশূন্য অট্টালিকা,
তোমার সারা শরীরময় আজও ঝরে পড়া রক্তের কালশিটে দাগ,
সাতচল্লিশ, বায়ান্ন থেকে একাত্তর, একাত্তর থেকে অদ্যাবধি এই
জনপদে অনেক বার বয়ে গেছে প্রতিবাদের রক্ত বন্যা, তবু আজও
মেটেনি কিছু সুবিধাভোগী নোংরা শকুনের সর্বগ্রাসী মাংসাশী খিধে,
আজও তাই রিক্তের স্বাধীনতা বন্দি হয়ে আছে বইয়ের পাতায়,
এখানে বিবেকের বিষাক্ত আঁধারে লুট হয়ে যাওয়ার আশংকায়
আজও দুরু দুরু বুকে কাপে সব হারিয়ে পাওয়া সার্বভৌমত্ব ।

বাঙ্গালী রক্ত দিতে জানে, জানে রক্ত নিতে, বাঙ্গালী ভালবেসে
হয়ে যেতে পারে নরম নদী, আবার সেই বাঙ্গালীই হতে জানে
ক্ষমাহীন অনন্ত অঙ্গার, নব্য শকুনেরা তোমাদের এই নোংরা
খেলা থামাও, রক্তে ভেজা এ প্রিয় পবিত্র ভুমি তোমাদের এই
নষ্ট প্রহসন আজ আর দেখতে চায় না, গন মানুষের ভাগ্য নিয়ে
এই ছিনিমিনি খেলার এবার ইতি টানো নির্লজ্জ লুটেরার দল,
বাঙালীর অসীম মমতা তুমি দেখেছ, মমতাকে দুর্বলতা ভেবে
ভুল করেছ, তার সর্বগ্রাসী উন্মত্ত ক্রোধ তুমি দেখতে চেয় না,
মানুষের অধিকারের উপর থেকে তোমাদের নোংরা হাত হটাও,
বাঙালীর রক্তে আজও ঘুমিয়ে আছে সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, একাত্তর,
তাকে ডেকো না তোমাদের সাজানো তাসের ঘর ভেঙে দিতে,
তাকে ডেকো না তোমাদের বাধভাঙা সর্বনাশের অনুষঙ্গ হতে,
হে স্বাধীনতা, এবার তুমি সব বৈষম্যের পাহাড় পায়ে দলে দলে
বইয়ের পাতা থেকে নেমে আসো বাস্তবের সবুজ ঘাস জমিতে,
বিত্তের খোঁয়াড় থেকে তুমি ভূমিষ্ঠ হও চিত্তের বিপুল আলোড়নে ।

ইতিহাসের পাতায় নতুন কালি

- সুবীর কাস্মীর পেরেরা

আমার দেশের ইতিহাসটা
কেন পাল্টে যায়,
কিছু মানুষ ডানে চলে
কিছু মানুষ বায়!
কেবা ঘোষক? কেবা পাঠক
দ্বন্দ্ব কেন মনে?
পচিশে মার্চ ডুকরে কাঁদে
দূর অজানা বনে।
নতুন করে শিখছি এখন
নতুন ইতিহাস,
ওরা ভাবে খাচ্ছি মোরা
কচি দুর্বাঘাস।
আমরা তো নই কানা-মুর্খ
নই তো হানাদার,
বিবেক-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে
তাই তো ওর মাথার।
নতুন নতুন কথা শুনে
অবাক আমার দেশ,
পাগল নাকি?আমরা সবাই?
বেশ বেশ বেশ!
শেরে বাংলা লোকারণ্য
নতুন শপথ করি,
ইতিহাসটা পাতায় থাকুক
আসুন দেশটা গড়ি।
 
ডাক

- PuZzle Jahan

ফিরেছে ইতিহাস , দস্যু মারাঠা |
বাংলার প্রাণে এখন মৃত্যুর ধামাকা |
মৃত্যুর ভয় হয়ে গেছে ক্ষয় !
এখনই সময় ওদের ঠেকাবার |
ডুবে গেছে চাঁদ অন্ধকার রাত করিসনা ভয়
ভাত আর জল ফুরিয়েছে তোর কিসের তবে সংশয়
প্রেম আর কাম, জীবনের দাম
ডাকাতের হাতে নয়
রক্ত যৌবনের ইতিহাস চিরকালের
করে দে গতিময় |
জেগে ওঠ একবার | হিংস্রতা এইবার !
রক্ত প্লাবনে দেশটা রাঙাবার !
ঘুমে ঘুমে মৃত্যু আর নয় আর নয়,
পিপাসার তিতাসে জল চাই গতিময় !
এই ডাকে দিক সাড়া সারাটা তল্লাট
এই দ্রোহ জীবনের মোহে ভুলে যাক
বন্দি জীবনের ঝঞ্জাট |
হোক তোলপার হোক বিদ্রোহ চারিদিকে
হোক যুদ্ধ হোক কাটাকাটি
শেষ করে দে আধুনিক মারাঠা'কে
জিতে নে জিতে নে স্বপ্নের দেশটাকে
কেটেকুটে শেষ কর দুঃস্বপ্নের রেশটাকে..
  

স্বাধীনতা সাধারণ

- দীপঙ্কর বেরা

আমি যদি মুখ তুলেই আকাশ দেখতে পাই ,
চলার পথে আমার ছড়িয়ে থাকে আলো
কথা গুলো কিছুতেই জমবে না বুকে
মাটির সোঁদা গন্ধের কাদা
লাগবে সহজেই আমার পায় ;
খাওয়ার থালায় স্নেহের খুদ কণা ভাগাভাগি
গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমিও নেতৃত্বের অংশীদার
গোলাপ হাতে সহজেই প্রকাশিত আমার প্রেম
বুক ভরে হৃদয়ে হৃদয় শ্বাস নিতে পারি ......
সেই আমার স্বাধীনতা - আমার বাঁচার স্বাধীনতা
রোজ লড়াই অসম বাঁচার তাগিদ
মরা জোৎস্নার কান্না উঠছে ঘরে ঘরে
ক্ষুন্নিবৃত্তির জোগাড়ে কেউ ঘুরে ঘুরে বেহাল
কারো ঘরে জমে ওঠে তারই কালো ছোপ ছাপ ;
কিলবিল আশাহত স্রোত অনাবিল
কথা জমে পাহাড়ে ঝর্ণা অবরুদ্ধ ;
স্বাধীনতা খুঁজে মরি আমার দেশ কালে
আমি সাধারণ বেঁচে আছি
আশার ভরসার মুখ তুলে আকাশে

স্বাধীনতার মান

- দূর্জয় দাশ

স্বাধীনতা কি? কারও আকাশচুম্বী বাড়ী,
স্বাধীনতা কি? দিন মজুরের প্রাশন বিহীন হাড়ি,
স্বাধীনতা কি? কারও বিলাষ বহুল গাড়ি,
স্বাধীনতা কি? পথিকের বুকে অকল্পিত ছুরি,
স্বাধীনতা কি? কারও থালায় মাংস পোলাও ভাত,
স্বাধীনতা কি? পথশিশুদের অনাহারে নির্ঘুম রাত,
স্বাধীনতা কি? কারও গায়ে অষ্টঅলংকার সোনা,
স্বাধীনতা কি? যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার গায়ে ছেড়া তেনা,
স্বাধীনতা কি? কারও আলতা রাঙ্গা পাঁ,
স্বাধীনতা কি? দরিদ্র মায়ের রোদে উদোম ঘাঁ,
স্বাধীনতা কি? বিত্তবানদের কাল টাকার ছরাছরি,
স্বাধীনতা কি? নির্দোষ মানুষের হাতে ডান্ডাবেড়ি,
স্বাধীনতা কি? কারও হাই সিকিউরিটিতে ঘেরা হোটেল রুম,
স্বাধীনতা কি? পথচারীর গায়ে ছোড়ে মারা পেট্রোল বোম,
স্বাধীনতা কি? হরতাল দিয়ে পোড়ানো কোন গাড়ি,
স্বাধীনতা কি? রাজপথে অস্রের কাড়াকাড়ি,
এ জন্যই কি দিয়েছিল? ত্রিশ লক্ষেরও অধিক শহীদ প্রাণ
আমরা কি রাখতে পেরেছি? স্বাধীনতার মান।
 
স্বাধীনতা মানে

-
জমাতুল ইসলাম পরাগ

স্বাধীনতা মানে
অরুণ আলোয় ছুঁয়ে যাওয়া ভোর
স্বাধীনতা মানে
খুলে যাওয়া নতুন দিগন্তের দোর।
স্বাধীনতা মানে
মক্তবের সমস্ত শিশুর কোরাস
স্বাধীনতা মানে
সকালের সদ্য ফোটা ফুলের সুবাস।
স্বাধীনতা মানে
মধ্য আকাশের তপ্ত রবি
স্বাধীনতা মানে
ফাগুনের আগুন লাগা ছায়াছবি।
স্বাধীনতা মানে
ঘুঘু ডাকা কোন মধ্য দুপুর
স্বাধীনতা মানে
কিশোরী মেয়ের চপল নুপুর।
স্বাধীনতা মানে
বিকেলের এলিয়ে আসা রোদ
স্বাধীনতা মানে
প্রৌঢ় বয়সীর গভীর জীবনবোধ।
স্বাধীনতা মানে
পশ্চিম আকাশে টকটকা রঙের গোধূলীলগন
স্বাধীনতা মানে
ফুল-পাখিদের ঘুমুতে যাওয়ার আয়োজন।
স্বাধীনতা মানে
রুপোর থালার মতো জ্বলজ্বলে চাঁদ
স্বাধীনতা মানে
কপোত-কপোতীর মিলন অবাধ।
স্বাধীনতা মানে
মধ্য নিশীথির তীব্র নির্জনতা
স্বাধীনতা মানে
দূরের বনে শেয়ালের ডেকে ওঠা।
স্বাধীনতা মানে
মায়ের কোলে শোয়ে অজানা গল্প শোনা
স্বাধীনতা মানে
প্রিয়ার চোখে চোখ রেখে হাজার স্বপ্ন বোনা।
স্বাধীনতা মানে
বাবার গলার দরাজ হুংকার
স্বাধীনতা মানে
ভাইয়ের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, সোনার দেশ গড়ার।
স্বাধীনতা মানে
বোনের হাতে পরা সুবর্ণ কংকন
স্বাধীনতা মানে
শ্যামলী পল্লীবালার ছবি অংকন।
স্বাধীনতা মানে
প্রেম,দ্রোহ বিজয়ের গান
স্বাধীনতা মানে
মুক্তিযুদ্ধের সাবলীল বয়ান।
  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন